বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন রিফাত হত্যাকাণ্ডের আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির প্রধান আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম।
শনিবার (২০ জুলাই) দিবাগত রাতে আইনজীবীর এই কাণ্ডে নাখোশ হলেও আজ সুর নরম করলেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।
তিনি জানান, এমপি শম্ভুর সঙ্গে আইনজীবীর বৈঠকে কোনো আপত্তি নেই তার। অথচ শুরু থেকেই ওই এমপির বিরুদ্ধে মামলায় প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করে আসছেন মিন্নির বাবা।
রবিবার দুপুরে দেওয়া এক সাক্ষৎকারে এসব কথা বলেন মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। তবে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার আগে মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল শনিবার মিন্নির আইনজীবীর সমালোচনা করে মোজাম্মেল হোসেন বলেছিলেন, ‘আপনাদের বুঝতে আর কিছু বাকি আছে?’ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মিন্নির আইনজীবী হিসেবে অ্যাডভোকেট আসলাম এমপির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যেতে পারেন কিনা জানতে চাইলে মিন্নির বাবা বলেছিলেন, ‘কোনোভাবেই পারেন না।
এ বিষয়ে অন্য আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান তিনি।
কিন্তু এই প্রতিবেদকের সঙ্গে রবিবার কথা বলার সময় বলেছেন ভিন্ন কথা। মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর এমপি শম্ভুর বিরুদ্ধে মামলায় প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করছেন শুরু থেকেই। তার সঙ্গেই আইনজীবীর বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরল অঙ্ককরণে আমি বলতে চাই, মাহবুবুল বারী আসলাম সাহেবকে আমি আস্থার সহিত এবং শ্রদ্ধা-ভক্তি রেখে অ্যাডভোকেট নিয়োগ করেছি। তার সদিচ্ছার কারণেই আমি তাকে নিয়োগ দিয়েছি। এখন তিনি সেখানে কী আলাপ করেছেন, এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। এটা নিয়ে আমি আর মন্তব্য করতে রাজি না।
মিন্নির আইনজীবী তার চরিত্র বিক্রি করবেন না-এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘উকিল সাহেব তো একজন বিচক্ষণ মানুষ। আমি মনে করি, তিনি তার চরিত্র বিক্রি করবেন না। তার অস্তিত্ব তিনি নষ্ট করবেন না। শম্ভু দা একজন স্থানীয় এমপি।
তিনি উকিল সাহেবকে ডাকতেই পারেন। তার বাসায় আসতেই পারে। এটা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই।
মিন্নির বাবা আরও বলেন, ‘শম্ভু দা একজন সিনিয়র পারসন। সেখানে আমার আইনজীবী যেতেই পারে। সেও তো বরগুনার বারের একজন সদস্য এবং সিনিয়র আইনজীবী। সে কারণে যেতেই পারে। এটা নিয়ে অন্যকিছু ভাবা ঠিক না।
এদিকে, মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে তো আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমেই বেঁচে থাকতে হবে। আমার মেয়েকে তো মুক্ত করতে হবে। পরবর্তী সময়ে সবার দোয়া নিয়ে আমি সামনের দিকে ধীরে ধীরে এগোতে থাকব। যাতে আমি আমার মেয়েকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারি এবং জামিনে বের করতে পারি।
আইনজীবী পরিবর্তন করবেন কি না-জানতে চাইলে মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘না না না, প্রশ্নই ওঠে না। আমি যাকে দিয়েছি, সরল অঙ্ককরণে-বিশ্বাসে আমি দিয়েছি। সে যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে, তাকে দেখার একজন মালিক আছেন।
গতকাল শনিবার রাতে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন আলোচিত রিফাত হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া মিন্নির সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম।
বরগুনার সদর রোডে এমপির ব্যক্তিগত ল’চেম্বারের পেছনের একটি কক্ষে আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলামকে দেখা যায়। এ সময় তার সঙ্গে বরগুনা বারের সভাপতি আবদুর রহমান নান্টুও ছিলেন।
এদিকে মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ সকালে মিন্নির জামিন আবেদন করে মামলাটি আদালতের কার্যতালিকায় তোলা হয়। পরে বেলা ১১টার দিকে তার জামিন শুনানি হয়। শুনানি শেষে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বেলা তিনটার দিকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়।
পরের দিন ওই ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে বরগুনা থানায় ১২ জনের নামে এবং চার-পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করেন। তবে মিন্নি এ মামলার প্রধান সাক্ষী হলেও পরবর্তী সময়ে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই মুহূর্তে ৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন মিন্নি।